সমুদ্র অভিযানের ইতিহাসে বিখ্যাত জাহাজগুলোর অন্যতম ‘নাও সান্তা মারিয়া’-এর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিলিপি লন্ডনের সেন্ট ক্যাথারিন ডকসে নোঙর করেছে। এই প্রতিরূপ জাহাজটি ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ঐতিহাসিক ১৪৯২ সালের ট্রান্সআটলান্টিক যাত্রায় ব্যবহৃত মূল জাহাজটির আদলে নির্মিত হয়েছে।
মূল সান্তা মারিয়া ছিল কলম্বাসের তিন জাহাজের বহরের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং তার প্রধান নেভিগেশন জাহাজ। সেই ঐতিহাসিক যাত্রা শেষে, একই বছরের শেষ দিকে জাহাজটি বর্তমান হাইতির উপকূলে ডুবে যায় এবং পরে তা ভেঙে ফেলা হয়।
২০১৮ সালে দক্ষিণ স্পেনের ‘নাও ভিক্টোরিয়া ফাউন্ডেশন’ এই প্রতিলিপি নির্মাণ সম্পন্ন করে। শতাধিক দক্ষ কারিগর ঐতিহাসিক নথি ও গবেষণার ভিত্তিতে আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করে এটি তৈরি করেন। কাঠের আবরণে মোড়ানো ফাইবারগ্লাস হালের মাধ্যমে ১৫ শতকের ক্যারাক ধাঁচের জাহাজের বাস্তব অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
২৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাহাজে চারটি ডেক রয়েছে: ক্রদের থাকার স্থান, ক্যাপ্টেনের কেবিন, বন্দুকের ডেক এবং মালামাল রাখার হোল্ড। ক্যাপ্টেনের কেবিনে পালকের কলম, হাতে লেখা নোট এবং প্রাচীন নেভিগেশন যন্ত্রপাতির প্রতিকৃতি ঐতিহাসিক আবহ তৈরি করেছে।
এই জাহাজটি একটি ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর হিসেবে কাজ করছে। ডেকে নেমে দর্শনার্থীরা জাহাজের ভেতরের অংশ ঘুরে দেখতে পারেন। প্রদর্শনীর মাধ্যমে ১৪০০ শতকের শেষের দিকের নাবিকদের জীবনযাত্রা, খাদ্য সংরক্ষণ এবং যাত্রার কষ্টকর বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। এক কোণে রাখা একটি কঙ্কাল সমুদ্র জীবনের কঠোর বাস্তবতা প্রতিফলিত করে।
জাহাজটি ঘুরে দেখতে আসা অনেক দর্শনার্থী তাদের মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। লন্ডনের বাসিন্দা স্কট অ্যাশডাউন বলেন, ‘জাহাজটি আমার কল্পনার চেয়েও ছোট, ভাবতে অবাক লাগে এত লোক কীভাবে এতে যাত্রা করতেন।’
রিডিং থেকে আসা আন্দ্রাস টির্নবাখ বলেন, ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ানের মতো সিনেমা দেখে বড় জাহাজ কল্পনা করেছিলাম। এখানে এসে বুঝতে পারি, আগের যুগে মানুষের জীবন কতটা কঠিন ছিল।’
আমেরিকান শিক্ষক পামেলা কাস্ক বলেন, ‘এটি বর্তমান প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে অনুভব করার একটি দুর্লভ সুযোগ। বাস্তবে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, এটি কল্পনার চেয়েও ছোট এবং কষ্টকর।’
‘নাও সান্তা মারিয়া’-এর এই প্রতিলিপি কেবল একটি জাহাজ নয়, এটি ইতিহাসের সঙ্গে একটি জীবন্ত সংযোগ। এই জাহাজের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা অতীতের মহাসমুদ্র পাড়ি দেওয়া অভিযাত্রিকদের সাহস, সংগ্রাম ও জীবনযাত্রা অনুভব করতে পারছেন। এটি ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।