ট্রাম্পের এশিয়া সফর: চীন-ভারতের জন্য নতুন বার্তা?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার প্রথম সফর শুরু করছেন। সফরের প্রথম দিনে মালয়েশিয়ায় আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান দেন তিনি। এরআগে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেন।

এসময় তিনি স্থানীয় শিল্পীরা নাচের মাধ্যেমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান। ট্রাম্পও তাদের নাচের সাথে সামিল হন। এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ছয়দিনের এই সফরে নানা কর্মসূচি রয়েছে ট্রাম্পের। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির তিন দিনের এই সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে শুল্ক এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ পদার্থ নিয়ে চুক্তি, মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার পটভূমি নিয়ে আলোচনা চুক্তি হওযার কথা রয়েছে।

সফরের প্রথম দিনে আজ রোববার ট্রাম্প থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রাম্পের ছয় দিনের সফরে তিনি জাপান এবং সাউথ কোরিয়াও যাবেন। সাউথ কোরিয়ায় প্রথমবারের মতো চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে মুখোমুখি দেখা কিংবা আলোচনাও হতে পারে ট্রাম্পের।

মূলত দুটি বড় আয়োজনে যোগ দিতে ট্রাম্পের এ মালয়েশিয়া সফর। একটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়া। অন্যটি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শত বছরের পুরোনো বৈরিতার অবসান ঘটাতে শান্তিচুক্তি সই। সর্বশেষ গত মে মাসে দেশ দুটি প্রাণঘাতী সীমান্ত বিরোধে জড়িয়েছিল। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প চীন ও ভারতকে নতুন বার্তা দিতে পারেন।

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি এ অঞ্চলে ট্রাম্পের প্রথম ও সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ সফর।
শান্তি চুক্তি সই পর ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সাথে বাণিজ্য চুক্তি এবং থাইল্যান্ডের সাথে একটি বিরল খনিজ চুক্তি সই করেন।

ট্রাম্পের এমন চুক্তি এশিয়া অঞ্চলে ট্রাম্পের প্রভাব বৃদ্ধি আর চীন ও ভারতকে পেছনে রাখার উপায় হিসেবেই দেখছেন অনেকে। এদিকে, চলমান শীর্ষ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট যোগ দিবেন না এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন না বলে জানা গেছে। তবে, তার ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দেওয়ার কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রেসিডেন্ট সরাসরি ট্রাম্পের সাথে বৈঠক বা আলোচনায় বসেননি। এশিয়ান সম্মেলন ঘিরে ট্রাম্প আসলেও এই দুই নেতা অনুপস্থিত।

তবে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেবেন বেশ কয়েকটি দেশের নেতারা। তারা হলেন-
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ানতো, লাওসের প্রধানমন্ত্রী সোনেক্সে সিফানডোন, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার থাইল্যান্ড। মিন চিন, পূর্ব তিমুরের প্রধানমন্ত্রী জানানা গুসমাও, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস হোর্তা।

বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি, সাউথ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি লি জে মিয়ং, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, সাউথ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামোফোসা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা এবং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনোও উপস্থিত রয়েছেন। ২০২১ সালে তার দেশে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী মিয়ানমারের জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেওয়া বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কাইর স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ট্রাম্পের দীর্ঘ সফরে কি সব চুক্তি আর আলোচনা হয় সেদিকেই তাকিয়ে বিশ্ব।