পুতুল সরকার
৬ অক্টোবর ২০২৩। শুক্রবার বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে বিমানের বিজি ২৪৭ ফ্লাইটে দুবাই যাত্রা।
দ্বিতীয়বারের মতো দুবাই যাচ্ছি। ২০২২ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রথমবারের মতো দুবাই গিয়েছিলাম। ৩, ৪ ও ৫ নভেম্বর বইমেলা ও বঙ্গসংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করেছিল দুবাই কনসুলেট। প্রথমবারের মতো আয়োজিত উৎসবে আমার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পালক অংশ নিয়েছিল।
এবারের যাত্রার উদ্দেশ্য অবশ্য ভিন্ন। ৭ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজার ইওয়ান হোটেলে পালন করা হবে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’ এর ২৫তম জন্মদিন। আয়োজক প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের সহযোগিতায় চ্যানেল আই দর্শক ফোরাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই উৎসবে আমি অংশ নিব। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেয়ার কথা ছিল ইমপ্রেস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু’র। আরো যাওয়ার কথা ছিল চ্যানেল আই এর প্রকৃতি ও জীবন ডেস্কের প্রধান আলীম আল রাজির। সময়মতো ভিসা না হওয়ায় রাজির যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যাত্রা বাতিল করেন মুকিত মজুমদার বাবু। অবশ্য জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বাবু ভাই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান।
নির্ধারিত সময়েই আমাদের বিমান দুবাই এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করল। ইমিগ্রেশন পর্ব শেষ করে আমি ওয়েটিং জোনে অপেক্ষা করছি মেহেদী হাসানের। মেহেদী চ্যানেল আইয়ের সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধি।
মেহেদীর সাংবাদিকতার হাতেখড়ি স্কুলজীবনে। ভৈরবের ছেলে মেহেদী ভীষণ চটপটে। কেমন যেন একটা অস্থির অস্থির ভাব সারাক্ষণ ওর মধ্যে। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় সেই ছিয়ানব্বইয়ের দিকে। তখন আমার প্রিয় বন্ধু কামরুজ্জামান কাজল ঢাকা থেকে সাপ্তাহিক মফস্বলচিত্র পত্রিকা বের করে। আমি এই পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক। প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। মেহেদী ওই পত্রিকায় জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করত।
সেই মেহেদীর সঙ্গে দেখা ২০২২ সালে দুবাইয়ে বইমেলায়। আমাকে পেয়ে মেহেদীর সে কি উচ্ছ্বাস। বুকে জড়িয়ে ধরল। দুই ভাইয়ের একসঙ্গে হওয়া ক…ত বছর পর।
মেহেদী দুবাইয়ে কি করে! দুবাইয়ে দেহেদীর ফ্ল্যাট বিজনেস। দুই/তিনটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সাবলেট দেওয়া। ব্যবসাটা মন্দ না। বাকি সময় কি করা হয়! সমাজসেবা। তুখোড় বক্তা সে। অন্যায়ের সঙ্গে কোনো কমপ্রোমাইজ নয়। অন্যায় সে যেই করুক তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ।
পাঁচ পাঁচটা দিন মেহেদীর সঙ্গে খুব ভালোই কেটেছে। শেষের দুদিন তো দারুণ কেটেছে। বাড়তি পাওনা ছিল রঙের মানুষ এর রূপকার নাট্যব্যক্তিত্ব মাসুম রেজা।
কথায় কথায় মেহেদীকে বলেছিলাম ও আবার সাংবাদিকতায় ফিরে আসতে চায় কিনা। আমার কথায় মেহেদীর চোখ ঝলমল করে উঠল। খুশির ঝিলিক নেচে গেল ওর সারা দেহমনে।
তারপর আমি দেশে ফিরে এলাম। মেহেদীর বিষয়ে অফিসে কথা বললাম। মেহেদী আরব আমিরাতের নিউজ পাঠাতে শুরু করল। আবার সাংবাদিকতায় মেহেদীর ফিরে আসা।
৭ অক্টোবর রাত আটটায় শারজার ইওয়ান হোটেলে চ্যানেল আই এর ২৫তম জন্মদিন উদযাপন করা হবে। আমি দুবাই এয়ারপোর্টে পৌঁছি রাত ১০টা ২৫ মিনিটে। মেহেদী আমাকে নিতে এলো রাত বারোটায়। ওর দেরির কারণ সাংবাদিকদের নিয়ে দুবাই কনসুলেটের একটা গোলটেবিল বৈঠক ছিল শারজায়। ওখানে ওকে অ্যাটেন্ড করতে হয়েছে। তাই আসতে কিছুটা দেরি।
ইওয়ান হোটেলে আমার জন্য একটা রুম বুক করা ছিল। আপাতত দুদিন আমরা, মানে আমি আর মেহেদী এখানেই থাকব।
এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সিতে সরাসরি হোটেল। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে হোটেলের হলরুমে গেলাম। বিশাল রড় হলরুম। এখানেই হবে জন্মদিনের অনুষ্ঠান। স্টেজ তৈরির কাজ চলছে। চেয়ার সাজানো হবে কিভাবে মেহেদী লোকজনদের বুঝিয়ে দিল। তারপর রুমে এসে অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা চলল রাত চারটা পর্যন্ত।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রাত আটটায়। কিন্তু রাত আটটায় এত বড় হলরুমের একাংশও ভরল না। অবশ্য নয়টার মধ্যে হলরুমের তিন ভাগের দুই ভাগ ভরে গেল। অনুষ্ঠান শুরু হলো রাত সাড়ে নটায়। তখন অবশ্য হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন আমার সঙ্গে পরিচিত হতে।
আমার সঙ্গে হ্যান্ডসেক করে মুখে একরাশ মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, আমি মাহবুব খন্দকার। আমার বাড়ি বাংলাদেশের যশোরের মিশন পাড়া। এখানে থাকি আবুধাবি।
মাহবুব সাহেবকে আমি আমার কার্ড দিলাম। উনি উনার সেলফোন নম্বর দিয়ে বললেন যোগাযোগ রাখতে। আমিও বললাম আপনিও যোগাযোগ রাখবেন।
আলোচনা পর্ব, কেক কাটা শেষে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ঢাকা ও কলকাতা থেকে এসেছে গানের শিল্পী। স্থানীয় শিল্পীরাও পারফর্ম করবেন।
অডিয়েন্সে বসে গল্প করছিলাম। ফাঁকে ফাঁকে মঞ্চের দিকে চোখ যাচ্ছিল। হঠাৎ মাহবুব ভাইকে দেখি স্টেজে কবিতা আবৃত্তি করছেন। ওমা! উনি একা নন। সঙ্গে আরো তিনজন। জানা গেল মঞ্চের মহিলা পারফর্মার উনার স্ত্রী প্রিয়াংকা খন্দকার। সঙ্গের দুই ছেলেমেয়ে উনার মেয়ে রূপসী, ছেলে বাংলা। উনারা আবৃত্তি করছেন সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘আমার পরিচয়’। এই কবিতাটি আমার ভীষণ প্রিয়। এই কবিতার আবৃত্তি শুনলে আমার সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।
‘পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের
কখনোই ভয় করিনিকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপস করিনি কখনোই আমি এই হলো ইতিহাস ।
এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তাঁরই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস, পায়ে উর্বর পলি ॥’
আমি কত সৌভাগ্যবান! এই বিদেশ বিভুইয়ে এসে আমার প্রিয় কবিতা আবৃত্তি শুনছি।
রূপসী বাংলা। এরকম নাম কারো হতে পারে! বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু বিশ্বাস করলাম যখন মেহেদী আমাকে কনফারম করল। তারপর কথা হলো রূপসী বাংলার সঙ্গেও। ওদের সঙ্গে কথা বলে আমি ফিরে গেলাম আমার তরুণ বেলায়। সেই নব্বই বিরানব্বইয়ের দিকে। যখন আমি সারা দেশ ঘুরে বেড়াতাম। আর কোথাও কোনো প্রতিভাবান শিশুকিশোর দেখলে ওদের ইন্টারভিউ করে নিয়ে আসতাম। যা প্রতি শুক্রবার দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার শাপলা কুঁড়ির আসরের পাতায় ছাপা হতো।
রাত দুইটায় অনুষ্ঠান শেষ হলো। অনুষ্ঠান শেষে সবার জন্য ডিনারের ব্যবস্থা ছিল। ডিনার খেতে খেতে মাহবুব ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কথা হলো।
রাতে হোটেল রুমে ফিরে মেহেদীকে বললাম রূপসী বাংলাকে নিয়ে একটা স্টোরি করব। তুমি কালই মাহবুব ভাইকে বলে টাইম ফিক্সড করো।
সকালে মেহেদী মাহবুব ভাইকে ফোন করে স্টোরির বিষয়টা জানাতেই মাহবুব ভাই সানন্দে রাজি হলেন। পরদিন সকাল সকাল আমরা আবুধাবি যাব। সকালে ওখানে নাস্তা সেরে যাব রূপসী বাংলার স্কুলে। স্কুল থেকে ওদের নিয়ে যাব শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে। মসজিদ দেখার ফাঁকে ফাঁকে আমি আমার কাজ সেরে নিব।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ এখানে আসেন এই মসজিদটি দেখতে।
১৯৯৬ সালে কাজ শুরু হয় আবুধাবির জাঁকজমকপূর্ণ এই মসজিদের। শেষ হতে সময় লাগে ১২ বছর। খরচ হয় প্রায় ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বমানের ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ হাজার কর্মী এই মসজিদটি তৈরিতে কাজ করেছেন।
এটি বর্তমান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ। আয়তন ২২ হাজার ৪১২ বর্গমিটার। যা প্রায় চারটি ফুটবল মাঠের সমান। একসঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন এই মসজিদে।
হাতে বোনা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কার্পেট, সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি এবং সবচেয়ে বড় গম্বুজ রয়েছে এই মসজিদে। আর এই তিনটিই স্থান করে নিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।
৮২টি সাদা মার্বেলের গম্বুজ, বাইরের ১ হাজার ৯৬টি কলাম, ভেতরের ৯৬টি মণি খচিত কলাম এবং ৭টি ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ খচিত ঝাড়বাতি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামানুসারেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। তিনিই এই মসজিদ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
এই মসজিদ নির্মাণের স্থাপত্য বিষয়ক নির্দেশনা তারই। তিনি তার সমাধি এই মসজিদে করার ইচ্ছা পোষণ করেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা গেলে মসজিদ চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।
দর্শনীয় এই মসজিদটির স্থপতি সিরিয়ার নাগরিক ইউসুফ আবদেলকি। তিনি পারস্য, মুঘল এবং মরিশ স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নকশা করেন। মসজিদের ভেতরের ফুলের নকশাগুলি করেছেন ব্রিটিশ শিল্পী ও চিত্রকর কেভিন ডিন।
মসজিদটি দেখার জন্য কোনো টিকিট কাটতে হয় না। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য এটি খোলা থাকে। রাত ৯টার পরে আর কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারেন না। এই সময়সূচির ব্যতিক্রম হয় শুধু শুক্রবারে। এদিন জুমার নামাজের দিকে খেয়াল রেখে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় বিকাল সাড়ে চারটা থেকে।
বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয় আলোকসজ্জা। সূর্যাস্তের পর এই মসজিদটির আলোকসজ্জা চোখ জুড়িয়ে দেয়।
আমাদের নেওয়ার জন্য মাহবুব ভাই গাড়ি পাঠিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে দশটায় আমরা মাহবুব ভাইয়ের গন্তব্য আবুধাবির হামদান স্ট্রিটের সুলতান টাওয়ারে পৌঁছি।
মাহবুব ভাই আমাদের নিয়ে যান উনার অফিসে। আল রীফ গ্রুপ অব কোম্পানি। এখানে মাহবুব ভাই হিসাবরক্ষক ও অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে আছেন। এই গ্রুপের মালিক মাহবুব ভাইয়ের বড়ভাই এনাম খন্দকার। তিনি ১৯৯০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসেন। নিজস্ব প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন এই আল রীফ গ্রুপ অব কোম্পানি। এই গ্রুপের অধীনে ৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে প্রায় ২শ লোক কাজ করেন। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশই বাঙালি।
মাহবুব ভাই ২০০৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক মাহবুব ভাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি যশোর জেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক (১৯৯৩-২০০৩) এবং সাধারণ সম্পাদকের (২০০৩-২০০৮) দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আবুধাবি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১২ সালের ২৬শে মার্চ যশোরের পুরাতন কসবার খড়কির বাসিন্দা প্রিয়াংকাকে বিয়ে করেন।
মাহবুব-প্রিয়াংকা দম্পতির প্রথম সন্তান বাংলা খন্দকার। জন্ম আবুধাবির কোরনেশ হাসপাতালে ২০১৩ সালের ২১ জুন। দ্বিতীয় সন্তান রূপসী খন্দকার। জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ভ্যাসার ব্রাদার্স হাসপাতালে ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর।
দুই ভাইবোন পড়াশোনা করছে আবুধাবির শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। বাংলা ক্লাস ফোরে এবং রূপসী ক্লাস থ্রিতে।

বাংলা খন্দকার
ফুটবল, দাবা, ক্রিকেট, ব্ল্যাক সুজ ও সাইক্লিং পছন্দ। কেএফসির খাবার ভীষণ প্রিয়। আরো প্রিয় চকলেট, আইসক্রিম, বিরানী ও গরুর মাংস। গান শুনতে ও গাইতে পছন্দ করে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। পড়তে ভালো লাগে দেশপ্রেম বিষয়ক বই। অবসরে টিভি দেখা হয়। মিস্টার বিস্ট খুবই ফেভারিট। বড় হয়ে পাইলট হতে চায়। আর যদি তা না হয় তবে ইঞ্জিনিয়ার। কারাতে শিখছে। অলরেডি ব্রাউন বেল্ট পেয়ে গেছে। ব্ল্যাক বেল্টের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রূপসী খন্দকার

সাইক্লিং দারুণ পছন্দ। বিকেলে সাইকেল নিয়ে বাসার আশেপাশে ঘোরাঘুরি প্রতিদিনের রুটিনওয়ার্ক। কেএফসির খাবার ভীষণ প্রিয়। আরো প্রিয় চকলেট, আইসক্রিম, বিরানী ও গরুর মাংস। গান শুনতে ও গাইতে পছন্দ করে। ছড়াগান ও দেশাত্মবোধক গান শেখা হয়। মাঝে মাঝে বই পড়ে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। পড়তে ভালো লাগে দেশপ্রেম বিষয়ক বই। অবসরে টিভি দেখা হয়। প্রিয় তালিকায় রয়েছে কার্টুন। ছবি আঁকতে ভালোবাসে। সময় পেলেই ছবি আঁকতে বসে যায়। বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায়। কারাতে শিখছে। অলরেডি ব্রাউন বেল্ট পেয়ে গেছে। ব্ল্যাক বেল্টের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাংলার পুরো মুখস্ত। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা মেলে বঙ্গবন্ধুবেশী বাংলার।
সংস্কৃতিজন মাহবুব-প্রিয়াংকা-রূপসী-বাংলা ধর্মকে মনেপ্রাণে শুধু লালনই নয়, পালনও করেন। রূপসী-বাংলার সুমধুর কণ্ঠে আল্লাহর নিরানব্বই নাম আমাদের মনকে তৃপ্ত করে।
বাংলা ও রূপসীর মা প্রিয়াংকা খন্দকার একজন গুণী মা। বাচ্চাদের দেখাশোনা ও ঘরগেরস্থালীর কাজের ফাঁকে ছবি আঁকতে পছন্দ করেন। কবিতা লেখেন। পাঠকদের উদ্দেশে তার একটি কবিতা নিচে দেয়া হলো।
মন কাঁদে মা/ প্রিয়াংকা খন্দকার
কতদিন দেখিনি তোমায়
তোমার জন্য মন কাঁদে মা।
আজো যেন আমি তোমার ছোট্ট প্রিয়াংকা
তোমার আঁচলের গন্ধ পাই এখনও আমি
এ মন ছুটে যায় তোমার কাছে।
জানো মা! সবার সামনে কিংবা আড়ালে
মন কাঁদে, এ মন কাঁদে তোমার জন্য।
জীবনের এ পর্যায়ে তোমার থেকে বহু দূরে
নিজেকে বেশ সামলে নিয়েছি মা।
সমস্ত কাজের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ
তোমার জন্য ফুঁপিয়ে উঠি মা।
দিন শেষে নিঝুম রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
তোমার জন্য এ মন কাঁদে মা।
তোমার জন্য আমার অভিব্যক্তি শেষ হবে না মা।

সারা দিনে আমার রূপসী বাংলার মাঝে
খুঁজে ফিরি আমাকে
আর আমার মাঝে খুঁজে পাই তোমাকে।
তোমার জন্য মন কাঁদে মা
তোমার জন্য এ মন কাঁদে।
মানুষ মানুষের জন্য এই প্রতিপাদ্যে বিশ্বাস করেন মাহবুব-প্রিয়াংকা দম্পতি। তাই তো সুদূর আবুধাবিতে বসেও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যশোরে গড়ে তুলেছেন রূপসী বাংলা সমাজকল্যাণ সংস্থা। যার মাধ্যমে কাজ করছে রূপসী বাংলা পাঠশালা, রূপসী বাংলা মাদ্রাসা, রূপসী বাংলা হস্তশিল্প এবং রূপসী বাংলা খেলাঘর।
প্রিয়জন মাহবুব-প্রিয়াংকা, আপনাদের জানাই অভিনন্দন। জানাই স্যালুট। আপনাদের মতো দেশপ্রেমিক আছে বলেই আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করতে পারি। বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে পারব দূর, বহুদূর…