মুহাম্মদ ফেরদাউস
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক একটি প্রস্তাবিত বাংলাদেশের বৃহৎ বিনোদনমূলক পার্ক। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা’র সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের পরিকল্পনার একটি অংশ “সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক”।
সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ২৮টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। আরো দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য দেশের ২৩ বিনিয়োগকারী ১১২ দশমিক ২৯ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে। এর বিনিময়ে তারা ৪১৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলার তরুণ প্রজন্ম যদি এই মুহূর্তে এগিয়ে এসে টুরিজমসহ বৈধ ব্যবসা, বৈধ কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচন ও কমিউনিকেশনে নিজেদের স্কিল না বাড়ায় এবং নিজেকে ডেভেলপ না করে, তাহলে তাদের জন্য আগামী ৫ বছরের পরের কক্সবাজার- টেকনাফের তরুন প্রজন্মের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং আফসোসের হবে।
কক্সবাজার-টেকনাফে আগামী দিনগুলোতে কি হবে তা এই প্রজন্মের অনেকেরই জানা নেই। অপার সম্ভাবনাময় এই সীমান্ত জনপদ টেকনাফে আগামী দিনগুলোতে নিজের এলাকার শ্রমবাজার বাহিরের লোক দখলে নিবে, যদি কক্সবাজার টেকনাফের তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব এখন থেকে এসব নিয়ে না ভাবে।
কেন ভাবতে হবে
১. গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেড এখানে তিন একর জমিতে প্রায় ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগে পর্যটন বান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলবে। এর মধ্যে রয়েছে, স্নোরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, প্যারাসেইলিং, জেট স্কিইং, প্যাডেল বোর্ডিং, বিচ ভলিবল, বিচ বোলিং ইত্যাদি।
২. গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড দেড় একর জমিতে প্রায় ৭৫ কোটি ডলার বিনিয়োগে গড়ে তুলবে ২১০টি রুম বিশিষ্ট থ্রি স্টার হোটেল, রিক্রিয়েশন সেন্টার এবং কনভেনশন সেন্টার।
৩. সানসেট বে লিমিটেড এক একর জমিতে প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ ডলার বিনিয়োগে ৩৭০টি রুম বিশিষ্ট ৫ তারকা হোটেলসহ পর্যটন বান্ধব স্থাপনা তৈরি করবে
সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ইতিমধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ অনুমোদন পেয়েছে, যার মাধ্যমে ২৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হবে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হবে। এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রিসোর্ট ও হোটেলের পাশাপাশি গলফ কোর্স, শপিং সেন্টার, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, অ্যামফিথিয়েটার, কনভেনশন সেন্টার, আ্যমিউজমেন্ট পার্ক, হাসপাতাল, ফায়ার স্টেশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র থাকবে।
এছাড়াও যোগাযোগের জন্য বাস ডিপো, ট্রান্সপোর্টেশন হাব, হেলিপ্যাড ও জেটি স্টেশন করা হবে। রাস্তা, ওয়াকওয়ে ওয়াক ওয়ে ও বাইসাইকেল লেন রাখা হবে।
বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টুরিজম স্পট নেই। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের ভেতরে ১০০ একর জায়গায় বিদেশিদের জন্য একটি “এক্সক্লুসিভ জোন” স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বিদেশি পাসপোর্ট দেখিয়ে প্রবেশ করতে হবে এ জোনে।
এটা তো শুধু একটা প্রকল্প, ভবিষ্যতে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোড চারলেন (কাজ চলমান) হবে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত শুধুমাত্র ৫ কিলোমিটারে মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কে পেছনে ফেলে ককসবাজার থেকে টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত সকলের আগ্রহের জায়গা হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে উন্মোচিত হবে এই দ্বার। সেন্টমার্টিনের জন্য এক্সক্লোসিভ জোনে যে জেটিঘাট নির্মিত হচ্ছে এবং জেটি ঘাটের জন্য যে প্রস্তাব আছে আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত সমুদ্রের গভীরে গিয়ে নির্মিত হবে । সেটা বাস্তবায়ন হলে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব শুধু ৩০-৩৫ মিনিটের। টেকনাফ জালিয়ার দ্বীপ ট্যুরিজম নাফ নদীতে পাহাড় সমুদ্র নদীর অপার সম্ভাবনাময় ট্যুরিজম। বন্দর করিডোর, শাহাপরীর দ্বীপের সৌন্দর্য সীমান্ত সড়ক মেরিন ড্রাইভের সাথে সংযুক্ত হয়ে যে মেলবন্ধনের সুযোগ সৃষ্টি হবে সেটা হবে নয়নাভিরাম যুগ উপযোগী নদী সমুদ্র ও পাহাড়ের অভূতপূর্ব আবিষ্কার। যা সারাবিশ্বকে হাত ছানি দিয়ে ডাকবে। এসো আমাদের কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ কর। মহান আল্লাহ’র সৃষ্টি যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে নদী ও সমুদ্রের অফুরন্ত মৎস্য আহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদ লবন, পান সুপারি দিয়ে আকর্ষন করতে পারব জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যটকদের।
সুতরাং কক্সবাজার তথা টেকনাফের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে টুরিজ্যমের মাধ্যমে নির্ভর করে অপার সম্ভাবনাময় কক্সবাজার- টেকনাফ কে উদ্ভাবন করা সম্ভব। এখন থেকে যদি নিজেদের প্রস্তুত না করা হয়, তাহলে এই বাজার ও সম্ভাবনাময় বৈধ ব্যবসা, বৈধ কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব নয়। জেলার বাইরের লোকদের দখলে চলে যাবে আমাদের এই সম্পদ।
এই ট্যুরিজমকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। বাংলাদেশ টুরিজ বোর্ড ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কক্সবাজার টেকনাফ অঞ্চলের তরুণ প্রজন্মকে পর্যটনমূখী বিভিন্ন কর্মশালা হাতে নিতে পারে । যাতে এতদঞ্চলের শিক্ষিত- অর্ধশিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম বৈধ কাজের সুযোগ পাবে। এগিয়ে যাবে বাঁধাহীন বৈষম্য হীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফলতা নিয়ে। এটাই হোক আমাদের শপথ। প্রজন্মকে পথ দেখাব, প্রতিষ্ঠিত হবে জন্মভুমি।
