সঠিকভাবে কুরবানীর মাংস ফ্রিজে রাখা গেলে ১ বছর পর্যন্ত তা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করা যায়। সেজন্য ৩ ধাপে সতর্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
কুরবানীর আগেই ফ্রিজকে বেশি পরিমাণ মাংস রাখার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে হবে ফ্রিজে মাংস ঢুকানোর সময়টায়। এরপর সেগুলো দীর্ঘদিন ভালো রাখতেও পরের ধাপে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
যেহেতু কুরবানীর সময় অনেকটা মাংস একসঙ্গে রাখতে হয় এবং সেগুলো দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে হয়- সেজন্য নীচের ১৩টি পরামর্শ অনুসরণ করতে পারেন।
মনে রাখবেন- মাংস শুধু ফ্রিজে রাখলেই ভালো থাকে না, তার জন্য দরকার সঠিক পদ্ধতি। এতে মাংস যেমন নিরাপদ থাকবে, তেমনি খাবারের অপচয় ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো যাবে।
তাই পাঠকদের জন্য রইলো- কুরবানীর মাংস ফ্রিজে দীর্ঘদিন ভালো রাখার ১৩ পরামর্শ।
পূর্ব প্রস্তুতি: পশু জবাইয়ের আগেই আপনার ফ্রিজকে কার্যকরভাবে মাংস সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করুন।
১. ফ্রিজ পরিস্কার রাখুন:
কুরবানীর মাংস ফ্রিজে ঢুকানোর কয়েকদিন আগেই পুরনো খাবার সরিয়ে তা পরিস্কার করে ফেলুন।
কারণ, নোংরা ফ্রিজে জীবাণু তৈরি হতে পারে, যা মাংসকে দীর্ঘদিন রাখার অনুপযোগী করে ফেলতে পারে।
২. ফ্রিজ ঠাণ্ডা রাখুন:
একসঙ্গে অনেক মাংস রাখলে ফ্রিজের ওপর চাপ তৈরি হয়। তাতে ফ্রিজের ঠাণ্ডা করার গতি ধীর হয়ে পড়ে।
সেজন্য কুরবানীর মাংস ব্যবহারের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে ফ্রিজ খোলা বন্ধ রাখুন। ফ্রিজে হালকা বরফ জমতে দিন। তাহলে আপনার মাংস দ্রুত ঠাণ্ডা হতে থাকবে।
কুরবানীর পর করণীয়: এটি ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই ধাপের ব্যবস্থাপনার উপরই ফ্রিজে মাংস দীর্ঘদিন ভালো থাকবে কিনা, তা নির্ভর করে।
৩. মাংস দ্রুত ফ্রিজে রাখুন:
কুরবানীর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাংস ফ্রিজে রাখুন। চেষ্টা করুন গরু জবাইয়ের ৪ ঘণ্টার মধ্যেই যেন মাংস ফ্রিজে ঢুকে।
কারণ যত বেশি সময় মাংস বাইরে থাকবে, তত তাতে জীবাণু বাড়ার শঙ্কা থাকে।
৪. ফ্রিজ সঠিক তাপমাত্রায় রাখুন:
মাংস নিরাপদ ও কার্যকরভাবে সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজের সঠিক তাপমাত্রা নির্ধারণ করুন। কারণ, মাংস সঠিকভাবে ঠাণ্ডা না হলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ফ্রিজের আদর্শ পরিমাপ হলো, এর তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা।
৫. ফ্রিজ অতিরিক্ত ভরবেন না:
অনেকে অতিরিক্ত মাংস জায়গা দিতে ফ্রিজ কানায় কানায় ভরে ফেলেন। এটি মাংসকে নষ্ট করে দিতে পারে।
কারণ, চাপাচাপি করে মাংস রাখলে সব জায়গায় সমভাবে ঠাণ্ডা বাতাস পৌঁছায় না। তখন ভিতরের দিকের মাংস ঠাণ্ডা হয় না, যেসব মাংস দ্রুত নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। স্বাদও বদলে যায়।
তাই মাংস রাখার ক্ষেত্রে প্যাকেটগুলোর মধ্যে হালকা ফাঁকা রাখুন, যার মধ্য দিয়ে সব জায়গায় বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
৬. মাংস ভেজাবেন না:
ফ্রিজে রাখার আগে পরিস্কার মাংস পানি দিয়ে ভেজাবেন না। কারণ, ধোয়ার ফলে মাংস জীবাণু আক্রান্ত হলে তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারবেন না। মাংসের স্বাদও বদলে যেতে পারে।
যদি মাংস নোংরা থাকে তাহলে তা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিস্কার করে দ্রুত শুকিয়ে নিন।
৭. মাংস সঠিকভাবে প্যাকেট করুন:
একবার রান্নার জন্য যেটুকু প্রয়োজনে, সে পরিমাণ মাংসের প্যাকেট তৈরি করুন। তাতে যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু মাংস সহজেই বের করে নিতে পারবেন।
কারণ, রান্নার জন্য মাংস বের করে আবার তা ফ্রিজে ঢুকালে তা মাংসের স্বাদ পরিবর্তন করে ফেলে। তাই বড় প্যাকেট না করাই ভালো।
প্যাকেট করার সময় ভিতরে যাতে বাতাস না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৮. সঠিক ব্যাগ বাছাই করুন:
স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ব্যাগে মাংস রাখুন, যাতে প্যাকেট না কোন ব্যাগে কি ধরণের মাংস আছে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। এছাড়া প্লাস্টিকের পাতলা ব্যাগ মাংস দ্রুত ঠাণ্ডা হতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না।
তাই মাংস সংরক্ষণের জন্য সঠিক সাইজের পরিস্কার ব্যাগ আগে থেকেই প্রস্তুত রাখুন।
৯. প্যাকেট সঠিকভাবে রাখুন:
ফ্রিজের সব জায়গা ভালভাবে ব্যবহার করতে প্যাকেটগুলো সঠিকভাবে গুছিয়ে রাখুন। তাহলে সহজেই অনেকগুলো মাংস রাখতে পারবেন।
যেসব মাংস আগে রান্না হতে পারে, সেগুলো সামনের দিকে রাখুন। তাহলে রান্নার সময় মাংস খুঁজতে কষ্ট হবে না। অন্য মাংসের প্যাকেটও সরাতে হবে না।
১০. মাংস সঠিকভাবে টুকরো করুন:
মাংস সংরক্ষণের আগে তা রান্নার উপযোগী সাইজের করে টুকরো করুন। যাতে পরবর্তীতে কাটার প্রয়োজন না হয়।
১১. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
পশু জবেহ করার পর বহু ধাপ পেরিয়ে মাংস ফ্রিজে ঢুকে। পুরো প্রক্রিয়ায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
মাংস কাটার যন্ত্র, মাংস রাখার স্থান, মাংস রাখার ব্যাগ ও নিজের হাত পরিস্কার রাখুন।
কারণ, মাংস সংরক্ষণের সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে জীবাণু আক্রমণ করতে পারে, যা মাংসকে দীর্ঘদিন ভালো রাখার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
ফ্রিজে মাংস রাখার পর করণীয়: ফ্রিজে রাখার পর কুরবানীর মাংস দীর্ঘদিন ভালো রাখতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
১২. বারবার ফ্রিজ খুলবেন না:
অনেকে মাংস রাখার পর তা ঠাণ্ডা হয়েছে কিনা দেখতে বারবার ফ্রিজ খুলেন। এতে ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নেই।
কারণ, প্রতিবার ফ্রিজ খোলার পর ঠাণ্ডা বাতাস বেরিয়ে যায়। যা আপনার মাংসকে ঠাণ্ডা হতে বাধা দেয়।
১৩. বের করা মাংস ফ্রিজে ঢুকাবেন না:
অনেকে মাংসের প্যাকেট বের করে গলিয়ে কিছু মাংস রেখে বাকিটা আবার ফ্রিজে ঢুকান। এটি ঠিক না।
এতে করে দ্রুত মাংসের গুণমান নষ্ট হয়ে যায়।
উপরের ১৩টি পরামর্শ মেনে মাংস সংরক্ষণ করতে পারলে দীর্ঘদিন ফ্রিজে মাংস নিরাপদে রাখা সম্ভব।