এটিএম আজহার: বাংলাদেশে আদালতের রায় ঘিরে বিতর্ক কেন?

বাংলাদেশের আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মঙ্গলবার এমন এক রায় এসেছে, যা নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

রায়ের প্রতিবাদে ঢাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন।

দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া একজন রাজনৈতিক নেতা এটিএম আজহারুর ইসলাম আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেয়েছেন।

এই রায় এমন সময়ে এসেছে, যখন দেশটিতে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর যেসব রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যাচ্ছে, তার একটি জামায়াতে ইসলামী।

এটিএম আজহার জামায়াতে ইসলামীর একজন শীর্ষ নেতা।

দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধিতা করায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত। সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে দাঁড়িয়ে বাঙালিদের হত্যা, ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতার ফাঁসি হয়েছে।

এসব রায় এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। যে ট্রাইব্যুনালে এটিএম আজহারও মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন।

এই আদালতে রিভিউ আবেদন করে খালাস পাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটলো।

এটিএম আজহারের রায় নিয়ে বিতর্ক কেন?

২০১৪ সালে গণহত্যাসহ নানা অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন এটিএম আজহার।

নতুন রায়ে বলা হচ্ছে, এর আগে এই মামলার প্রমাণাদি আদালত সঠিকভাবে বিবেচনা করতে পারেনি।

রায়ের পর আসামী পক্ষের আইনজীবীরা উল্লাস প্রকাশ করলেও রাষ্ট্রপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

মৃত্যুদণ্ড থেকে এটিএম আজহারের খালাস পাওয়ার পর তার আইনজীবী শিশির মনির, এই ঘটনাকে পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন বলছেন।

সমালোচনাকারীরা এই রায়কে ন্যাক্কারজনক বললেও জামায়াতে ইসলামী রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। অনেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

বাংলাদেশে গেল ৫ আগস্ট ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়ার পর উচ্চ আদালতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি মেনে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতেও দেখা যায়।

এটিএম আজহারের রায়ের প্রতিবাদে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।

সেখানে ছাত্র নেতারা, এই রায়ের সঙ্গে মব সহিংসতার প্রভাব, সরকার ও জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল এই রায়কে ‘ভয়ানক ন্যাক্কারজনক’ ঘটনা মন্তব্য করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

“স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্নে অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পেরেক মেরে দিয়েছে। আপনারা গণঅভ্যুত্থানকে জামাতের কোলে তুলে দিচ্ছেন”, বলেন তিনি।

তার বক্তব্য, এটিএম আজহারের শরীরে একাত্তরের রক্তের দাগ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার রায়ের সমালোচনা করে বলেন, “এই সরকারের আমলে মব সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী ও একাত্তরের গণহত্যাকারীদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে।”

তার অভিযোগ, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর সরকার ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানপন্থীদের উত্থানের বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।

এটিএম আজহারের রায় নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের নেতৃত্বস্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন উদিচীর একাংশ।

রায় প্রত্যাখান করে উদিচীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই রায় স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যাকারীদের প্রতি রাষ্ট্রের অনুকম্পা।

উদিচী জামায়াতে ইসলামীর বিচারও দাবি করেছে।

এই রায়ের পর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাম গণতান্ত্রিক জোটও।