টাঙ্গুয়ার হাওর: হাউজ বোটে ভ্রমণ কতটা নিরাপদ?

বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোর একটি টাঙ্গুয়ার হাওর। সুনামগঞ্জের এই হাওর দিন দিন দেশটির পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান ভ্রমণ গন্তব্য হয়ে ওঠছে।

আর জনপ্রিয়তা বাড়ার পর টাঙ্গুয়ার হাওরের ভ্রমণ ব্যবস্থাপনাও পাল্টে গেছে। প্রচলিত নৌকার পরিবর্তে বিলাসবহুল হাউজ বোট এখন হাওরের পরিবহন আকর্ষণের কেন্দ্রে চলে এসেছে।

কিন্তু এসব হাউজ বোটে ভ্রমণ কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠছে।

প্রতিবছরই হাউজ বোট কোন না কোন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

চলতি বছর হাওরের পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েছে একটি হাউজ বোট।

হাউজ বোটটির ১২ জন পর্যটক নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারলেও টাঙ্গুয়ার হাওরের ভ্রমণ নিরাপত্তার পুরনো প্রশ্নটি আবার সামনে এসেছে।

কি ঘটেছিল রাহবার হাউজ বোটে?

রাহবার হাউজ বোটটি শুক্রবার দিনে ১২ জন পর্যটক নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যায় বোটটি নীলাদ্রি লেক এলাকার নদীতে এসে অবস্থান নেয়।

মূলত নৌকায় রাত কাটানোর জন্য অন্য বোটগুলোর মত রাহবারও এই এলাকায় এসেছিল।

ঘটনার সময় বোটে পর্যটকদের জন্য খাবার তৈরি করা হচ্ছিলো। পরে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে দাউ দাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

পুরো নৌকা পুড়তে দেখে অন্যান্য বোটের পর্যটকদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ১২ জন পর্যটককে রাহবার হাউজ বোট থেকে অন্য একটি নৌকায় নিয়ে আসা হয়।

হাউজ বোটে ভ্রমণ কতটা নিরাপদ?

টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় হাউজ বোটের চাহিদাও বেড়েছে। এই ফাঁকে অনেকেই যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখেই হাউজ বোট তৈরি করে ব্যবসা করছে, এমন অভিযোগ পর্যটকদের।

তারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন।

ঢাকার একজন পর্যটক ফরিদ আহমেদ মনে করেন, কিছু হাউজ বোট মানসম্পন্ন থাকলেও অনেক বোটই নিরাপত্তা প্রটোকল মানছে না।

“প্রশাসনের উচিত সব ধরণের বোটের ফিটনেস যাচাই করা। উপরে যা ইচ্ছা করার মত নৌকার ক্যাপাসিটি আছে কিনা, তা দেখা উচিত। আমরা চাই না, ভ্রমণে এসে কেউ বিপদে পড়ুক।”

পর্যটকরা বলছেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে এখন বড় বাজেটের অনেক আধুনিক হাউজ বোট এসেছে। তবে তার তুলনায় পুরনো ছোট নৌকাকে হাউজ বোট বানানোর প্রতিযোগিতা আরও বেড়েছে।

কিশোরগঞ্জের পর্যটক মেহেদী হাসান মনে করেন, এসব হাউজ বোটে তুলনামূলক খরচ কম পড়লেও ঝুঁকি অনেক বেশি।

“এটা তো জীবন-মরণের বিষয়। আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। নৌকাটা লোড নিতে পারছে কিনা, ফায়ার সেফটি আছে কিনা- সব ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত।

প্রশাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, হাউজ বোটে নিরাপত্তার বিষয়টি নজরদারির বাইরে থাকাটা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

যা বলছে হাউজ বোট কর্তৃপক্ষ

রাহবার হাউজ বোটে আগুন লাগার পর সমালোচনার মধ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছে হাউজবোট ওনার্স এসোসিয়েশন।

সংগঠনটি বলছে, তাদের সদস্য নৌযানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক।

এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পর্যটকবাহী নৌযানে নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।