সুখী হওয়ার সহজ ৫ উপায়

অন্তহীন ব্যস্ততার যুগে মানুষের সুখে থাকা আরাধনার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

মানুষ পার্টি করছে, ঘুরতে যাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত ছুড়ছে- এতকিছুর ভীড়েও নিজেকে কখনো সে অসুখী হিসেবে আবিস্কার করছে!

একান্ত নিজের কাছে ফিরে এসে সে ঔষধের দামে ঘুম কিনছে। সম্পর্ক ভেঙে দিচ্ছে। অস্থিরতায় ডুবে যাচ্ছে। জীবনে বিরতি খুঁজছে।

অসুখী হওয়ার এই পথ থেকে আমরা সহজেই সরে আসতে পারি। আমাদের বুঝতে হবে- কখনো শান্ত থাকাও বেঁচে থাকার দক্ষতা হতে পারে। কিছু কিছু বিচ্ছিন্নতা হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সুখে থাকার কৌশল।

জীবনের জন্য কোন লড়াইটি প্রয়োজন, কোথায় নিজেকে আটকাতে হবে, কোন বিষয়টি এড়িয়ে যেতে হবে- সুখী হওয়ার জন্য এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।

নীচে থাকছে সুখী হওয়ার সহজ ৫ উপায়, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন।

১. সবার পছন্দের হতে যাবেন না

সুখী হতে চাইলে সবার পছন্দের তালিকায় থাকার চেষ্টা বাদ দিন। সবার প্রিয় হওয়ার চেষ্টা ধীরে ধীরে আপনাকেই অসুখী করে তুলতে পারে। অন্যের মতামত হয়ে ওঠবে আপনার মূল্য নির্ধারক।

অফিসে, বন্ধুদের সাথে অথবা অনলাইনে- অন্যদের খুশি করতে থাকলে আপনি নিজের চাহিদাগুলোর প্রতিই মনোযোগ দিতে ভুলে যাবেন। অনেকক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিত্ব এবং মূল্যবোধকেও উপেক্ষা করতে হতে পারে।

সবাই আপনাকে পছন্দ করবে না- এই সত্যটি মেনে জীবন এগিয়ে নিতে পারলে সহজেই অহেতুক কষ্ট আপনাকে ছুঁতে পারবে না।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিজের প্রতি সৎ থাকা, এমনকি অন্যরা আপনার সঙ্গে একমত না হলেও।

২. কোথায় মনোযোগ দিবেন, তা ঠিক করুন

আপনি এমন যুগে বসবাস করছেন, যখন মুহূর্তেই নোটিফিকেশনে মোবাইল স্ক্রিণ ভরে ওঠছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জানালা দিয়ে সহজেই আপনার দুয়ারে চলে আসছে- দুঃসংবাদ, বিনোদন, পরামর্শ। রয়েছে মতামত জানানোর সীমাহীন সুযোগ।

ব্যক্তিগত জীবনেও বাড়াবাড়ি রকমের জায়গা করে নিচ্ছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। মানুষের উদযাপন এখন আর কেবল বিয়ে-জন্মদিনের অনুষ্ঠানে থেমে নেই।

এগুলো কেবল কিছু উদাহরণ, এমন একটু একটু করে আমাদের জীবন বহু পথে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু সবকিছুতে সাড়া দিলে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, বিরক্তির অসুখ আপনাকে ঘিরে ফেলবে।

তাই সুখী হতে চাইলে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে যে, আসলে কোন বিষয়টি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

নিজের মূল্যবোধ, লক্ষ্য এবং অগ্রাধিকার- এ বিষয়গুলো বুঝে নিতে পারলে অহেতুক ব্যস্ততাকে সহজেই না বলে দিতে পারবেন। মনে রাখবেন, অহেতুক ব্যস্ততা জীবনে কেবল গোলমালই বাড়াতে পারে।

আর যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ- সেসব বিষয়ে মনোযোগ দিলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।

৩. সুখকে ফলনির্ভর বানাবেন না

সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনি কঠোর পরিশ্রম করবেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ফল পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত আসক্তি হতাশা তৈরি করতে পারে।

কোন কাজ, সম্পর্ক বা লক্ষ্যের পরিণতি কি হবে- তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না হয়ে আপনি আপনার সেরাটা দেওয়ার প্রতি মনোযোগী হোন।

মনে রাখবেন- সবকিছু সবসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী হয় না। এই সহজ ও চিরন্তন সত্যটি মেনে নিতে পারা আপনাকে অনেক বেশি মানসিক শান্তি দিতে পারে।

৪. সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ততা কমান

সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি আপনাকে আপনার জীবন সম্পর্কে ভুল ধারণা দিতে পারে।

অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা আপনার আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে। একইসঙ্গে অযাচিত প্রত্যাশাও তৈরি হতে পারে।

মনে রাখবেন- সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ যা দেখায়, বাস্তবতা তারচেয়ে অনেক ভিন্ন হতে পারে।

অনলাইনে থাকার পর যদি আপনি প্রায়শই উদ্বিগ্ন বোধ করেন বা ভালো বোধ না করেন- তাহলে আপনি যা দেখছেন তা আবার বিবেচনা করুন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কি দেখবেন, কতটুকু দেখবেন- তার সীমা নির্ধারণ করুন, প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিন। আপনার মন ভালো থাকবে।

৫. সবকিছুর জবাব দিতে যাবেন না

সবার সব মতামত বা মন্তব্যের জবাব দিতে হয় না। সবকিছুর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে গেলে, অতিরিক্ত চিন্তা করলে- আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন।

তাই প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে একটু থামুন। ভাবুন, এটি আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয় কিনা। যে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে যাচ্ছেন, তা আপনার জন্য অর্থপূর্ণ কিনা। অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে জবাব দেয়া বন্ধ করুন। কোন বিষয়ে অযাচিতভাবে ঢুকে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।

মনে রাখবেন- কোনকিছু থেকে পিছিয়ে আসা মানে নিজের চারপাশকে অবহেলা করা নয়, এটি হলো নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

তাই, নিজেকে সুখী রাখতে অপ্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া মননে-মগজে টেনে আনা বন্ধ করুন।