যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসা স্থগিতে যেভাবে ভেঙে পড়ছে তরুণদের স্বপ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসা স্থগিত

সায়মা সাব্বির, ইসলামাবাদ

লাহোরের মোহাম্মদ ইব্রাহীম বড় হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছেন।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্তে জীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায়ে ঢুকার আগেই ইব্রাহীমের সব স্বপ্ন ভেঙে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব জুড়ে তাদের স্টুডেন্ট ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। আর এই সিদ্ধান্তেই ইব্রাহীমের যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার সব কার্যক্রম থমকে গেছে।

ইব্রাহিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শর্ত পূরণ করে ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও এখন আমার জীবন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে আটকে গেছে।

“এই মুহুর্তে অপেক্ষা করা, আশা করা এবং এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা ছাড়া আমার কিছু করার নেই। কারণ সবকিছুই হঠাৎ আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এটি ভীষণ হতাশার।”

মার্কিন স্টুডেন্ট ভিসা স্থগিত কেন?

গাজায় ইসরায়েলের প্রাণঘাতি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই বিশ্বজুড়ে মানুষ প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে।

এ বিষয়টিই যুক্তরাষ্ট্রকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। কারণ মার্কিন সরকার সবসময়ই ইসরায়েলের পাশে থেকেছে। বলা হয়ে থাকে, ওয়াশিংটনের প্রশ্রয়েই ইসরায়েল বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।

এমন অবস্থায় গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসে ইসরায়েল বিরোধী তৎপরতা বাড়াকে দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে ওয়াশিংটন।

এজন্য বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থী নেওয়ার জন্য আরও বেশি যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

তারই অংশ হিসেবে আপাতত স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো। একই সঙ্গে ভিসা আবেদনকারীর ফেইসবুক-টুইটারের মত প্লাটফর্মের কার্যক্রম যাচাই করবে যুক্তরাষ্ট্র।

এর ফলে বিশ্বের যেসব তরুণ যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে চান, তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে চাওয়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশের তরুণদের জন্য এই সিদ্ধান্ত বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। কারণ, দেশ দুটিতে তরুণরা গাজার প্রতি ব্যাপক সমর্থন জানিয়ে আসছে।

আর বিষয়টি যে ওয়াশিংটন ভালভাবে নিবে না, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

আর পাকিস্তানের তরুণদের জন্য এ অবস্থা মেনে নেয়া আরও কঠিন। কারণ, দেশটির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভঙুর অবস্থার মধ্যে বহু তরুণ উচ্চ শিক্ষাকে সামনে রেখে দেশ ছাড়তে চাইছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসা স্থগিতের প্রভাব

লাহোরের ইনায়া মুর্তজা ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত ক্ষতিকারক হিসেবে দেখছেন, যা অনেক তরুণকে আমেরিকার চমৎকার উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত করবে।

“এ সিদ্ধান্তে আমি মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”

যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের একজন পাকিস্তানের শেখুপুরার মালিক জালাইদ হাসান।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে ভর্তি হওয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, “আমি তো আর আমার টাকা ফেরত পাব না, আমি অনেক টাকা হারিয়েছি। ইতোমধ্যে হাজার হাজার ডলার টিউশন এবং আবাসন ফি পরিশোধ করে ফেলেছি। কিন্তু পড়তে যেতে পারবো কিনা তা জানি না।”

শিক্ষার্থীদের মত শিক্ষা পরামর্শক হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিরাও মার্কিন সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

লাহোরের একটি শিক্ষা পরামর্শদাতা সংস্থা ইউনিগ্র্যাডের কাউন্সেলর আয়ান আখতার বলেন, “ভিসা নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা অনেক শিক্ষার্থীকে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এটি বিবেচনা করা উচিত।”